• বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪২৮
মাস্ক কাহন

ফাইল ছবি

মুক্তমত

মাস্ক কাহন

  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২০

এক লোক হুজুরের কাছে গেলো।  হুজুর আমার কুয়ার পানি গন্ধ করে কি করবো? হুজুর বললো পানি ফেলো।  লোকটি বাড়িতে আসলো কুয়া থেকে পাঁচ বালতি পানি ফেললো।  দুর্গন্ধ কমলোনা।  আবার গেলো হুজুরের কাছে।  হুজুর আবার একই কথা বললো পানি ফেলো। আবার বাড়ি ফিরে ১০- বালতি তুলি ফেললো।  এভাবে কেয়েকদিন গেলো। এবার দুর্ঘন্ধ বাড়তে লাগলো। রাগে ক্ষোভে আবার হুজুরের কাছে গেলো এবং বললো হুজুর আপনি কি পরামর্শ দিচ্ছেন? কুয়ার পানিতে আরো দুর্ঘন্ধ বাড়তেছে। হুজুর বললো এবার তুমি প্রথম থেকে কি হচ্ছিলো খুলে বল। হুজুর, রান্না ঘরে একটা বিড়াল ঢুকেছিলো।  আমার স্ত্রী টের পেয়ে লাঠি দিয়ে বিড়ালটাকে তাড়া করেছিলো। সেদিনের পর বিড়ালটা আর আসে নাই।  কুয়াটা রান্না ঘরের পাশেই ছিলো।  ....... হুজুর বললো আর বলতে হবে না।  যা এবার বাড়ি গিয়ে আগে মরা বিড়ালটা তুলে উপরে আনা রে বেটা ..... তারপর ১০০ বালতি পানি তুলে ফেলে দে। 

.....এরপর পর কি হবে আর বলার দরকার নেই।  তবে হা। আমরা কি সে রকমই কিছু  করছি  নাতো।  চীন এর উহান এ ভাইরাস ধরা পড়ার আমরা অনেক সময় পেলাম।  আমরা wait and see করতে লাগলাম।  আমাদের দেশে এসেই গেলো।  আমরা নিয়মিতো বিবৃতি দিতে থাকলাম। ভাইরাস কোনদিক দিয়ে কোনদিক যাচ্ছে তার পিছু নিতে থাকলাম।  হাত দোহার স্যানিটিযার নাই, হ্যান্ডওয়াশ নাই মাস্ক নাই।  নাই নাই নাই। 

লকডাউন হতে লাগলো এলাকা শহর গোটা দেশ। 

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো বেশ।

মৃত বিড়ালটি কুয়াতেই থাকলো। লক্ষণ সহ বা লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাসের পোষক মানুষ ঘুরতে ঘুরতে ছড়িয়ে পড়লো সারা দেশে। আসল কারণে চোখ গেলো না।

শহর গ্রামের সবাই মাস্ক পড়তে লাগলো। শুরুতে মাস্ককের একটু ঘাটতি দেখা দিলো।  যাদের মাস্ক সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই তারাও মাস্ক বানানোর ব্যাবসায় এলো।  এর পর বাহারি মাস্ক আসতে লাগলো বাজারে। 

আমিও কয়েক প্রকারের কয়েকটি মাস্ক নিলাম।  আজকে একটা মাস্ক পড়লাম বেশ ভালো লাগলো।  কারণ নাকের কাছে যে ডিভাইস ছিল তা দিয়ে ভালো বাতাস আসছিলো।  কয়েকদিন থেকে টানা মাস্ক পরে যে দম খাটো হয়ে আসছিলো।  তা আজ লাগলো না।  ভালো।  নজর দিলাম এই মাস্ক এ। খুললাম মাস্কের এই সাদা ডিভাইস টা।  যা দেখলাম তাতে অবাক হলাম।  আশা করছি আপনিও অবাক হবেন। 

এবার একটু করোনা ভাইরাসটাকে ব্যাবচ্ছেদ করি।  করোনা ভাইরাস হলো সিঙ্গেল স্ট্রান্ডেড আর এন এ ভাইরাস।  এটি গোলাকআর পার্টিকেল যা দুই লেয়ারের লিপিড ও কাটার মতো প্রটিন দিয়ে গঠিত।  এর জিনোমে সাইজ ২৭ থেকে ৩৪ হাজার বেস পেয়ার।  এর ডায়ামিটার বা ব্যাস হলো ১২০ nm (ন্যানোমিটার)। আকারটা একটু খুলে বলি।  ১ ন্যানোমিটার হলো ১ মাইক্রোন এর ১০০০ ভাগের ১ ভাগ। আর ১ মাইক্রন হলো ১ মিলিমিটার এর ১০০০ ভাগের এক ভাগ। বুঝা গেলো কি ? যদি একটি বলপেন কলমের মাথার শীষটা ১ মিলিমিটারের ধরি তার ১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ হলো ১  ন্যানোমিটার। 

এখন ওই যে বললাম যে মাস্কটা পরে বেশ ভালো লাগছিলো।  তার সাদা গোল ডিভাইসটার ভিতরে যে নেটটা  ছিল তার ভিতর বলপেন কলমের মাথাটি  ঢুকিয়ে দিলাম।  এখন মাস্কের সুতার নেট এর ভিতর যদি কলমের মাথার শীষটা ঢুকে যায় তবে তা দিয়ে কি ১২০ ন্যানোমিটারের করোনা ভাইরাস পার্টিকেল ঢুকবে না? অবশই ঢুকবে।  শুধু তাই না আকার অনুযায়ী বলতে গেলে এই মাস্কের একটি সিদ্র দিয়ে পাশাপাশি একসাথে ৮০০০ করোনা ভাইরাস ঢুকতে পারবে।  সে জন্য ডাক্তাররা এন-৯৫ রেস্পিরেটরি  মাস্ক পড়তে বলেন।  যা মুখের সাথে লেগে থাকে টাইট ভাবে।  এবং সকল বাতাস এই মাস্কের নেট অংশ দিয়ে দুখতে ও বের হতে বাধ্য ভাইরাস ছাড়া । তবে নরমাল মাস্কওই পাওয়া কঠিন আর  এন-৯৫ রেস্পিরেটরি  মাস্ক তো পরের কথা।  একক ভাবে ভাইরাস প্রবেশের কথা বাদ দিলাম বাতাসে ভেসে থাকা হাঁচির  ড্রপলেট ও এই মাস্ক এর ভিতর দিয়ে অনায়েসে ঢুকে যাবে।  বাজারের সব মাস্ক অবশ এরকম নয়।  তবে খেয়াল রাখবেন বিষয়টা।

মাস্ক কাহিনী কেবল শুরু... 

বিশেষ করে বাজারে প্রচলতো কাপড়ের মাস্ক পড়লে দেখবেন নাকের কাছে অনেকটাই  ফাঁকা জায়গা আছে।  সেদিক দিয়ে অনায়াসে লক্ষ লক্ষ ভাইরাস ঢুকতে পারে। আপনি কি সবসময় মাস্ক পরে থাকবেন।  অপরিষ্কার হাতে যদি খোলেন বা মাস্কটা ধরেন আপনার হাতের মধ্যে লেগে থাকা সম্ভাব্য ভাইরাস কণা সহজেই নাক দিয়ে চলে যেতে পারে আপনার ফুসফুসে। আবার কয়েকদিন ধরে আপনি একই মাস্ক পড়ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। পড়া অবস্থায় আপনি কথা বলছেন।  কাশি দিচ্ছেন।  মাস্কটা ভিজে গেছে।  গন্ধ লাগছে।  তার মানে ওই মাস্কে অসংখ ব্যাকটেরিয়া এর আবাস গড়ে উঠতে পারে। করোনা নাই বা হলো ওই ব্যাকটেরিয়া দিয়েই আপনার ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে। ভালোর জন্য পড়ে  তা আরো খারাপ হলো। 

তবে কি প্রচলিত ওই মাস্ক পরে কোনো লাভ নাই।  হা আছে।  মাস্ক পড়লে  এক দিকে যেমন অসুস্থ মানুষের হাঁচি কাশি এর ড্রপলেট গুলি (ভাইরাস সহ) বাহিরের পরিবেশে কম আসবে। অপরদিকে কম করে হলেও ধুলা (কখনো কখনো তা ভাইরাসের বাহক হতে পারে) থেকে রক্ষা  পাওয়ায় যাবে।

বলছিলাম যে মরা বিড়ালটাকে আগে সরাতে হবে।  সর্দি কাশি সহ অন্যন্য লক্ষণ গুলি থাকলে তাকেই আগে আইসোলেশন এ থাকতে হবে মাস্ক পড়তে হবে।  

আসুন  সঠিক মাস্ক সঠিক নিয়মে পড়ি ।  আইসোলেশন এ থাকি, ঘরে থাকি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি।  স্বাস্থ সচেতনতা মেনে চলি।  করোনা ভাইরাস ছড়ানো রোধ করি যতটা সম্ভব ।  মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। 

ড. মোঃ মুজাহিদ-ই-রহমান

লেখক :  ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট

নশিপুর, দিনাজপুর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads